১৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ডেঙ্গুর পাশাপাশি করোনা বাড়াচ্ছে উদ্বেগ

নিজেস্ব প্রতিবেদক

দেশে ডেঙ্গুর পাশাপাশি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে করোনা সংক্রমণ। শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৪৯ জন। এ সময় ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ১৩ জুন ৫ জনের মৃত্যু হয়। যেটি একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল। অন্যদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৬ জনের দেহে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ সময় করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। করোনার পাশাপাশি এ বছর ঢাকার বাইরে বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু ও করোনা সংক্রমণ উদ্বেগ বাড়ালেও জনসাধারণের অসচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা কম দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া বিগত সরকারের সময় এই সমস্যাগুলো সংশোধন করা হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন এগুলো নিয়ে বিভিন্ন সুপারিশ করলেও তা এখনো বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে গৃহীত পদক্ষেপগুলো এখন থেকেই কার্যকর বাস্তবায়ন না হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এ বছর ডেঙ্গুর তুলনায় করোনা সংক্রমণের হার এখনো কিছুটা কম। এই দুই সংকট মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৩৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৩৯ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৯ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৮ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৫ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৮ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৭ জন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫ জন, রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৩ জন, সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১ জন রয়েছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ২২২ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছরে এ যাবত মোট পাঁচ হাজার ২৯৯ রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। ১৫ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৯৮৮ জন। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৪১ দশমিক শতাংশ নারী রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় একজনের মৃত্যুসহ চলতি বছরে ডেঙ্গুতে ৩০ জন মারা গেছেন। সবশেষ মৃত ব্যক্তি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার বাসিন্দা।

এদিকে, ডেঙ্গু সংক্রমণে সবচেয়ে শীর্ষে আছে বরিশাল বিভাগ। অন্যদিকে মৃত্যুর দিক থেকে ঢাকা। এ পর্যন্ত যারা ডেঙ্গুতে মারা গেছেন, তাদের অর্ধেকই ঢাকা মহানগরের দক্ষিণাঞ্চলের। এছাড়া, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন চলতি মাসে। গত মে মাসে এক হাজার ৭৭৩ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু জুনের ১৫ দিনে দেশব্যাপী এক হাজার ১ হাজার ৬৪৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। ডেঙ্গুতে মৃত্যু হারও এখন পর্যন্ত চলতি মাসেই বেশি। এ মাসে ইতোমধ্যে ৭ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। অথচ পুরো জানুয়ারিতে মারা গিয়েছিলেন ১০ জন।

করোনা সংক্রমণ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৬ জন। মহামারির শুরু থেকে দেশে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৮৩৩ জনে। সেই সঙ্গে করোনায় এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫০৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন চারজন। ফলে এ সংখ্যা ২০ লাখ ১৯ হাজার ৪১০ জনে দাঁড়িয়েছে। মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা যুগান্তরকে বলছেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু সংক্রমণের হার বেড়ে যায়। কিন্তু এ বছর একই সময়ে করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটায় বিষয়টি উদ্বেগের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনাভাইরাসের নতুন উপধরনের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালগুলোতে করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। কিন্তু হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে করোনা পরীক্ষার কিট ও টিকার সংকট রয়েছে। জেলা পর্যায়ে আইসিইউ, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, সেন্ট্রাল অক্সিজেনের সংকট আছে। অন্যদিকে ডেঙ্গুর চিকিৎসায় হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধপথ্য, স্যালাইন, প্লাটিলেট কিট, জনবল ও স্থান সংকটে চিকিৎসক ও স্টাফরা হিমশিম খাচ্ছেন।

বরগুনায় ডেঙ্গুর হটস্পট ঘোষণা : ঢাকার বাইরে বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন উপকূলীয় জেলা বরগুনা সদর হাসপাতালে। হাসপাতালটিতে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বরাদ্দ শয্যা সংখ্যা ৫০টি হলেও সেখানে কয়েকগুণ বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ফলে বরগুনা জেলাকে ডেঙ্গুর হটস্পট ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

বরগুনা প্রতিনিধি জানান, সদর হাসপাতালে অধিকাংশ ওয়ার্ডেই শয্যার সংকটে অনেক রোগীকে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। অনেক রোগীকে বারান্দা ও করিডরে বিছানা পেতে রাখা হয়েছে। এতে করে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। শয্যার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে রক্ত পরীক্ষার কিট এবং স্যালাইনের সংকট। অনেক রোগীকেই বাইরে থেকে টেস্ট করাতে ও স্যালাইন কিনে আনতে হচ্ছে।

বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত এ জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৮৩৮ জন। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৬২৩ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২১৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ৭৯ জন। তবে সরকারি হিসাবে মৃত্যুবরণ করেছেন ৬ জন। এছাড়াও ঢাকা ও বরিশালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বরগুনার বাসিন্দা মৃত্যুবরণ করেছেন ৮ জন। এই রোগীর অধিকাংশই বরগুনা পৌর শহর ও সদর উপজেলার বাসিন্দা। একই সঙ্গে জেলার পাথরঘাটা, বামনা, বেতাগী ও আমতলীতেও বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর প্রকোপ।

বেলাল হোসেন নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘হাসপাতালে শয্যা সংকটে তার ভাই তিন দিন ধরে মেঝেতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার হাসপাতালের ল্যাবে টেস্ট করা যাচ্ছে না। স্যালাইনও বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। হাসপাতালের পরিবেশ অনেক খারাপ। কারণ হচ্ছে, এত পরিমাণে রোগী এখানে পা রাখার জায়গা নেই সুস্থ লোক এলে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে ইতোমধ্যে ভয়াবহ ডেঙ্গু কেড়ে নিয়েছে ১৩টি তাজা প্রাণ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। চিকিৎসক সংকট, অপর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীর সংকট পরিস্থিতিকে আরও বেশি বিপদাপন্ন করে তুলছে। সংকট মোকাবিলায় নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রেজোয়ানুর আলম বলেন, রোগীর চাপ সামাল দিতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরণ দ্রুত সরবরাহ না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মাদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ ধারণ করায় চিকিৎসা সেবাদানে বিঘ্ন ঘটছে। তারপরও চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হয়েছি।

রোববার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, রাজধানীসহ সারা দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেঞ্জ রিঅ্যাকশনসহ (আরটি-পিসিআর) বিভিন্ন পদ্ধতিতে সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে সরকার। রোববার থেকে দেশের ১৭টি স্থানের (সেন্টার) ল্যাবরেটরিতে আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিগুলোতে পর্যাপ্ত টেস্ট কিট সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহের জন্য ভিটিএম (ভাইরাল ট্রান্সমিশন মিডিয়া) পাঠানো হয়েছে। তারা সন্দেহভাজন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে নিকটস্থ ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য পাঠাবে। সারা দেশে করোনা রোগীদের স্যাম্পল সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব জেলায় র‌্যাপিড এন্টিজেন কিট সরবরাহ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বরগুনায় ডেঙ্গু রোগী বাড়ায় প্রতিটা উপজেলা হাসপাতাল পর্যায়ে প্রায় এক হাজার ব্যাগ পর্যন্ত আইভিফ্লুইড (স্যালাইন) সরবরাহ করা হয়েছে। স্বল্পমেয়াদি চিকিৎসক পদায়ন করা হয়েছে। তাছাড়া পরিস্থিতি এখনো উদ্বেগ হওয়ার মতো ঘটেনি। ঢাকা ও বাইরে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আমাদের বেশকিছু নিজস্ব স্যালাইন মজুত আছে, সেগুলো আরও কিছু দিন যাবে। এরপরও অন্যান্য উৎস থেকে আইভিফ্লুইড কেনার প্রক্রিয়াধীন আছে।

লন্ডন বৈঠকের সিদ্ধান্ত ইসিকে দ্রুত জানান: সরকারকে সালাহউদ্দিন

প্যারিস এয়ার শোতে চীনের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান

হাসিনার মামলা ঘিরে ট্রাইব্যুনালের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

গাজায় আরও ৫৯ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করল ইসরাইল

ডেঙ্গুর পাশাপাশি করোনা বাড়াচ্ছে উদ্বেগ

ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠকে রাজনীতিতে স্বস্তির পরিবেশ ফিরেছে

ট্রেন্ডিংয়ে মালাইকার ‘ক্ষতিপূরণ’

গ্রস রিজার্ভ ২৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল

এবারের ঈদুল আজহা অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় স্বস্তিদায়ক ছিল