ইসলামি শাসনে পরিচালিত ইরানে নারীদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক। কিন্তু দেশটির সর্বোচ্চ নেতার ঘনিষ্ঠ সহযোগীর মেয়ের বিয়ে ঘিরেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কনে মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও স্ট্র্যাপলেস বিয়ের গাউন পরেছেন। তার মাথাও খোলা। জানা গেছে, ইরানের প্রধান নেতা আলি খামেনির ঘনিষ্ঠ আলী শামখানির মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল সেটি, কনে শামখানির মেয়ে।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে শামখানির মেয়ের বিয়ে হয়। সেই অনুষ্ঠানের একটি ভিডিও সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়, এতে দেখা যাচ্ছে— তেহরানের বিলাসবহুল এস্পিনাস প্যালেস হোটেলে ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডমিরাল শামখানি তার মেয়েকে হাত ধরে স্বামীর কাছে নিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় কনে ফাতেমাকে একটি ছোট, স্ট্র্যাপলেস পোশাক পরা অবস্থায় দেখা যাচ্ছে, যার মাথাও প্রায় স্পষ্টভাবে খোলা ছিল।
ভিডিওতে শামখানির স্ত্রীকে একই রকম খোলামেলা নীল রঙের লেইসের সান্ধ্য গাউন পরা অবস্থায় দেখা যাচ্ছে, তার পিঠ এবং পাশের অংশ খালি। তিনিও মাথায় স্কার্ফ পরেননি। ভিডিওতে আরও বেশ কয়েকজন নারীকে হিজাব পরা অবস্থায় দেখা গেছে।
ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ভিডিও ফুটেজটি ১৭ অক্টোবর এক্সে (সাবেক টুইটার) ফাঁস হয় বলে জানা গেছে।
কনে ফাতেমাহ যখন একটি সাদা স্ট্র্যাপবিহীন, নিচু গলার গাউন পরে হোটেলের অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন, তখন অতিথিদের উল্লাস করতে দেখা যায়।
পশ্চিমা ধাঁচের এই অনুষ্ঠান ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। সাধারণ নারীদের ক্ষেত্রে শালীনতা ও হিজাবের নিয়ম বহাল রাখা হয়েছে। কিন্তু এই অনুষ্ঠানে ঠিক উল্টো জিনিস দেখা গেছে।
শামখানি একসময় হিজাববিরোধী প্রতিবাদ–বিক্ষোভ দমনে সরকারের কঠোর অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এখন তার বিরুদ্ধে হিজাবের নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।
সমালোচকরা খামেনি শাসনব্যবস্থার দ্বিমুখী নীতির সমালোচনা করেছেন। তারা বলছেন যে দেশে হিজাব বাধ্যতামূলক এবং শালীনতা আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে, সেখানে পশ্চিমা ধাঁচের বিয়েতে কনে ও তার মায়ের খোলামেলা পোশাক অস্বাভাবিক।
ইরানের নির্বাসিত মানবাধিকারকর্মী মাসিহ আলিনেজাদ এক এক্স বার্তায় লিখেছেন, ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্রের শীর্ষ আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের একজন আলী শামখানির মেয়ের বিয়েতে স্ট্র্যাপলেস পোশাক পরে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন করা হয়েছিল। অন্যদিকে, এখনো ইরানে নারীদের চুল দেখানোর জন্য মারধর করা হয় এবং তরুণরা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে না।’
ইরান ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন অনুসারে, শামখানির মেয়ের এই বিয়ে ২০২৪ সালের এপ্রিলে হয়েছিল। এই বিয়ের অনুষ্ঠানে ইরানের বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা উপস্থিত ছিলেন।
ওই অনুষ্ঠানের ভিডিও এবং তীব্র প্রতিক্রিয়া এমন এক সময়ে এল, যখন কর্তৃপক্ষ হিজাবের নিয়ম কঠোরভাবে কার্যকর করতে তেহরানে ৮০ হাজার নতুন নীতি পুলিশ মোতায়েন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইরানি বংশোদ্ভূত সুইডিশ পার্লামেন্ট সদস্য আলী রেজা আখুন্দিও শামখানির মেয়ের এমন পরিবেশে বিয়ের অনুষ্ঠানের সমালোচনা করে এটিকে ‘ভণ্ডামি, দুর্নীতি ও ভয়ের বহিঃপ্রকাশ’ বলে অভিহিত করেছেন।
আলী রেজা আরও বলেন, ইসলামিক রিপাবলিকের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ও দমনমূলক কর্মকর্তাদের একজনের মেয়ে স্বাধীন পোশাকে এক জমকালো অনুষ্ঠানে বিয়ে করছেন। তাঁর বাবা ক্ষমতাবান বলেই তিনি স্বাধীন।
৭০ বছর বয়সী শামখানি খামেনির দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ। তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং জ্যেষ্ঠ সামরিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিনি সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের নেতৃত্ব দেন।
শামখানি দায়িত্বে থাকাকালে সরকার ২০২২ সালে মাসা আমিনির মৃত্যুর পর শুরু হওয়া প্রতিবাদ–বিক্ষোভ দমনে সহিংস অভিযান চালায়। হিজাবের নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে আটক হওয়ার পর পুলিশ হেফাজতে ২২ বছর বয়সী মাসা মারা যান।
শামখানি ২০২৪ সালের এই ভিডিও ফাঁস করার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছেন। ইরান ইন্টারন্যাশনাল তাকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘মানুষের গোপনীয়তা হ্যাক করা ইসরাইলের হত্যার নতুন পদ্ধতি।’
এছাড়াও ইরানের সাবেক মন্ত্রী এজ্জাতুল্লাহ জারঘামি শামখানির পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছেন, পুরো অনুষ্ঠানে মাথা নিচু করে রেখেছিলেন শামখানি এবং সেখানে নিকটাত্মীয় ছাড়া শুধুমাত্র নারীরা আমন্ত্রীত ছিলেন।
শামখানি এর আগে জুনে তেহরানের নিজ বাসভবনে ইসরাইলি বিমান হামলায় বেঁচে গিয়েছিলেন।