১৩ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্কে নতুন বাঁক কেন?

নিজেস্ব প্রতিবেদক

পরাশক্তি রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফের ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পর, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দিক থেকেও সুসম্পর্কের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। যদিও নিউজ উইক-গার্ডিয়ানের মতো পত্রিকাগুলো বিষয়টি সন্দেহের চোখে দেখছে। ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়্যার সূত্রে নিউজ উইক বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইরান এবং চীনের সঙ্গেও রাশিয়ার গভীর সম্পর্কের প্রদর্শন অশুভ ইঙ্গিত দেয়। তবে রাশিয়া বর্তমানে যে আমেরিকাকে কাছে পেয়েছে তা একটি নতুন সম্পর্কের দ্বার উন্মোচনে সহায়ক হবে বলেই তারা মনে করছে। ট্রাম্প-জেলেনস্কির কথার উত্তাপ থেকে তৈরি হওয়া ইউরোপের আশঙ্কা রাশিয়াকে অনুপ্রাণিত করেছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আলেকজান্ডার দারচিয়েভের মতো দক্ষ কূটনীতিককে নিয়োগ দিয়ে মস্কো বুঝিয়ে দিয়েছে, তিক্ত সম্পর্ককে মিষ্টি করার যথেষ্ট আগ্রহ তাদের। দুই দেশের কথার টোনেও পরিবর্তন লক্ষণীয়। সম্প্রতি মস্কোর বিশেষ আগ্রহে রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র তাদের পুরনো অর্থনৈতিক সম্পর্ক সচলে ফের আলোচনা শুরু করেছে। দুই দেশের পুনর্মিলনের কারণে তারা ধাতু, বিরল খনি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য যৌথভাবে কাজের চুক্তির দিকে ধাবিত হচ্ছে।

ইউক্রেন আক্রমণের আগে থেকেই রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পর্ক সীমিত ছিল। চীন ও ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্যে দুটি দেশ এখনো প্রতিদ্বন্দ্বী। ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের সম্ভাব্য আলোচনার আগে ওয়াশিংটনের অবস্থান নরম করার লক্ষ্যে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতার বেশকিছু সম্ভাব্য জায়গা তুলে ধরেছে। নিজের সর্বশেষ পদক্ষেপে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বিরল মৃত্তিকা উপাদান এবং অ্যালুমিনিয়ামের ওপর যৌথ প্রকল্পের প্রস্তাব করেছেন। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে বলেন, ‘আমরা আমাদের আমেরিকান অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য উন্মুখ থাকব এবং যখন আমি ‘অংশীদার’ বলি, তখন কেবল প্রশাসনিক এবং সরকারি সংস্থা নয় বরং বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও বোঝাতে চাই। যতক্ষণ না তারা একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ দেখায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ান অ্যালুমিনিয়াম রপ্তানি পুনরায় শুরু হলে দামও কমে যেতে পারে।’

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনার জন্য প্রতিনিধি নির্বাচনেও রাশিয়ার অর্থনৈতিক মনোযোগ স্পষ্ট। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে রুশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন কিয়েভে জন্মগ্রহণকারী, হার্ভার্ডে পড়াশোনা করা অর্থনীতিবিদ কিরিল দিমিত্রিভ। যিনি রাশিয়ান ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের (আরডিআইএফ) প্রধান। পুতিনের ঘনিষ্ঠ মহলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একজন দক্ষ টেকনোক্র্যাট দিমিত্রিভ। যাকে অর্থনৈতিক চুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ট্রাম্প এবং ইলন মাস্কের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক স্থাপনের কৌশল গঠনের কৃতিত্ব দেওয়া হয়। যদিও রিয়াদে আলোচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের অর্থনৈতিক কর্মকর্তাদের পাঠায়নি। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট পরে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ইউক্রেন শান্তি চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পরে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

অর্থনৈতিক সম্পর্কের অবস্থান

রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক প্রায় নেই বললেই চলে। ২০২৪ সালে যেখানে রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৫০০ মিলিয়ন ডলার, সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ার রপ্তানি ৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। দাপ্তরিক তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালের যুদ্ধ-পূর্ব বছরে এই পরিসংখ্যান ছিল যথাক্রমে ৬.৪ বিলিয়ন ডলার এবং ২৯.৬ বিলিয়ন ডলার। বিপরীতে, ২০২৪ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইইউতে ৩৭০.২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং ইউরোপ থেকে ৬০৫.৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে।

ইউক্রেনে ক্রেমলিনের আগ্রাসনের পর মূলত স্থবির হয়ে পড়া রাশিয়া-মার্কিন বিনিয়োগ সম্পর্ক একসময় উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব বহন করে। সরাসরি বিনিয়োগের সঠিক পরিমাণ গণনা করা অত্যন্ত কঠিন, কারণ বিনিয়োগগুলো প্রায়ই মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যেখানে করব্যবস্থা অনুকূল, যেমন নেদারল্যান্ডস বা সাইপ্রাসের মাধ্যমে। এই অনুশীলনটি দেখে মনে হয় যে, দেশগুলো রাশিয়া এবং জর্জিয়ার মতো ইইউ-বহির্ভূত দেশে প্রধান বিনিয়োগকারী।

জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, রাশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী। রাশিয়ায় পরিচালিত প্রধান আমেরিকান কোম্পানিগুলোর বাইরে, মার্কিন বিনিয়োগকারীরা পূর্বে আইটি জায়ান্ট ইয়ানডেক্স, খাদ্য খুচরা বিক্রেতা ভিকুসভিল এবং অনলাইন মার্কেটপ্লেস ওজোনসহ শীর্ষস্থানীয় রাশিয়ান সংস্থাগুলোতে অংশীদারত্ব রেখেছিলেন। তবে এটি বিশ^ব্যাপী মোট মার্কিন বিনিয়োগের আনুমানিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের একটি ছোট অংশ। এদিকে ২০২২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ার বিনিয়োগ ন্যূনতম ৩ বিলিয়ন।

বিশ্ব অর্থনীতি গঠনে অংশীদারত্ব

রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশ। তারা চীন, ভারত এবং ইউরোপসহ রপ্তানি বাজারের জন্য প্রতিযোগিতা করে। ট্রাম্প তার প্রথম প্রশাসনের সময় ইউরোপকে আরও আমেরিকান তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনার জন্য চাপ দিয়েছিলেন, যা অবশেষে রাশিয়ার ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণের পর ঘটেছিল। এই দুই দেশ আরও অনেক বেশি এলএনজি রপ্তানি করতে চায়, তাই তারা সেখানে প্রতিযোগিতা করছে। রাশিয়া-আমেরিকার সহযোগিতার আরেকটি সম্ভাব্য ক্ষেত্র, আর্কটিকেও, দুই দেশ প্রতিযোগিতামূলক জাহাজ চলাচলের পথ তৈরি করছে। রাশিয়ার লক্ষ্য উত্তর সমুদ্র রুট দিয়ে আরও বেশি এলএনজি পরিবহন করা, যা ইউরোপ ও এশিয়াকে সংযুক্ত করে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র উত্তর-পশ্চিম প্যাসেজকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, যা কানাডিয়ান আর্কটিকের মাধ্যমে আটলান্টিক এবং প্রশান্ত মহাসাগরকে সংযুক্ত করে।

লেখক: সাখাওয়াত হোসেন সুজন

ঈদে আসছে না ‘নতুন নোট’

বাঁচানো গেলো না মাগুরার শিশু আছিয়াকে

৪ দিনের সফরে আজ ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘ মহাসচিব

‘প্রতিকারের পাশাপাশি কিডনি রোগ প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি জরুরি’

ওপেন-সোর্স চিপের নকশা নিয়ে এগোচ্ছে চীন

খাদ্য অধিদপ্তরে ১,৭৯১ পদে চাকরির সুযোগ

যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্কে নতুন বাঁক কেন?

আরও ৬০ দিন বাড়ল সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা

জনগণের বিশ্বাস অর্জনে যেসব কৌশল ব্যবহার করতেন হাসিনা