১৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ইরান ইস্যুতে ট্রাম্পের সামনে যে ৩ পথ খোলা

নিজেস্ব প্রতিবেদক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনো ইরানে ইসরাইলের হামলায় জোরালো সমর্থন জানাচ্ছেন, কখনো নিজের সেই অবস্থান থেকেই দূরে সরে যাচ্ছেন। আবার কিছু সময় পর আবারও আগের সমর্থনে ফিরে আসছেন।

চলমান ইরান-ইসরাইল সংঘাত নিয়ে এই দ্বিধাদ্বন্দ্বই মূলত ট্রাম্পের বাস্তব অবস্থানকে অস্পষ্ট করে তুলেছে। সংঘাত যতই বাড়ছে, ততই অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে।

এদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এসব হামলা ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পুরোপুরি সমন্বয় করেই’ চালানো হয়েছে।

তাহলে এখন প্রশ্ন হলো–– ট্রাম্প কী কী বিষয় বিবেচনায় নিচ্ছেন? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো- এখন তার সামনে কী কী বিকল্প পথ খোলা রয়েছে? 

১. নেতানিয়াহুর চাপে নতি স্বীকার ও সংঘাত বাড়ানো

গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে (১৩ জুন) ইসরাইল যখন তেহরানে বিমান হামলা চালায়, তখন ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের নেতাদের এই বলে হুমকি দেন যে, চুক্তি না করলে ইসরাইলের পক্ষ থেকে ‘আরও ভয়ঙ্কর’ হামলা আসবে, যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বোমায় সজ্জিত।

নেতানিয়াহুর মতো তিনিও বলেন, ইরানকে কখনোই পারমাণবিক বোমার মালিক হতে দেওয়া যাবে না।

তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- ট্রাম্প বলেছেন, তার পছন্দের পথ- যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে একটি চুক্তি করা (এ পথটি তার নিজের দাবি করা ‘বিশ্বমানের চুক্তি-কারিগর’ ইমেজের সঙ্গেও যায়)।

কিন্তু কীভাবে সেখানে পৌঁছাতে হবে, সে বিষয়ে তিনি দ্বিধায় ভুগেছেন। কখনো শক্তি প্রয়োগের হুমকি দিয়েছেন, কখনো জোর দিয়েছেন কূটনীতির দিকে।

গত সপ্তাহে তার এক বক্তব্যেও এ দ্বিধা ফুটে ওঠে। তিনি বলেছিলেন, ইরানের ওপর ইসরাইলি হামলা হয়তো চুক্তিতে সাহায্য করবে, অথবা সেটা পুরো চুক্তিকেই ‘বিধ্বস্ত’ করে দেবে।

তবে ট্রাম্পের এই অনিশ্চয়তাপূর্ণ অবস্থান বা অস্থিরতাকে অনেক সময়ই তার সমর্থকরা তার কৌশল হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। এটাকে তারা বলছেন ‘ম্যাড ম্যান থিওরি’ বা কূটনীতির তথাকথিত ‘পাগল তত্ত্ব’।

এ তত্ত্ব অনুযায়ী, ইচ্ছাকৃত অনিশ্চয়তা বা অপ্রত্যাশিত আচরণ প্রতিপক্ষকে বাধ্য করে একটি নির্দিষ্ট পথে আসতে। এ তত্ত্বটি মূলত প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের স্নায়ুযুদ্ধকালীন কৌশলের সঙ্গে সম্পর্কিত।

ট্রাম্পের কিছু উপদেষ্টা ও সমর্থক ইরান ইস্যুতে এই ‘পাগল তত্ত্ব’ কৌশলের পক্ষে। তাদের বিশ্বাস, এসব হুমকিই শেষ পর্যন্ত সফল হবে। কারণ তারা মনে করেন, ইরান আসলে আলোচনায় আগ্রহী না (যদিও ২০১৫ সালে ওবামার নেতৃত্বে হওয়া একটি পরমাণু চুক্তিতে ইরান স্বাক্ষর করেছিল, যেটা ট্রাম্প পরে বাতিল করে দেন)।

মূলত কূটনৈতিক পথ নয়, নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরেই ট্রাম্পকে সামরিক পথ বেছে নিতে চাপ দিয়ে আসছেন। আর ট্রাম্প শেষমেশ হয়তো ইরানের নেতৃত্বের প্রতি তার আগ্রাসী হুমকিগুলোকেই বাস্তবায়নের দিকে এগোবেন। যদিও তিনি বহুবার নোবেল শান্তি পুরস্কার পাবার আগ্রহ দেখিয়েছেন।

তবে চলমান যুদ্ধে ইসরাইল গোপনে আরও জোরালোভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে জড়াতে চাইতে পারে। কারণ তারা মনে করে কাজটা যেন দ্রুত শেষ করা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন বাংকার ধ্বংসকারী বোমা আছে যা ইরানের ফরদো-তে অবস্থিত ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ধ্বংস করতে পারে বলে বিশ্বাস ইসরাইলের।

এদিকে সংঘর্ষ যতই বাড়ছে, ততই কংগ্রেসের রক্ষণশীল রিপাবলিকানদের কাছ থেকে ট্রাম্পের ওপর চাপ বাড়ছে। কেননা, তারা বহুদিন ধরেই ইরানে সরকার পরিবর্তনের ডাক দিয়ে আসছেন।

ট্রাম্প হয়তো এটাও ভাবছেন যে, এতে ইরান দুর্বল অবস্থায় আলোচনায় বসতে বাধ্য হবে।

কিন্তু সত্যটা হলো, ইরান ইতোমধ্যেই আলোচনার টেবিলে ছিল। কারণ ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে ওমানে রোববার ষষ্ঠ দফা আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন সেই আলোচনাও বাতিল হয়ে গেছে।

২. মধ্যপন্থা

এদিকে এখন পর্যন্ত ট্রাম্প বারবার বলে আসছেন, ইসরাইলের হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত নয়। তবে সংঘাত বাড়লে সেটি ট্রাম্পের জন্য বড় ঝুঁকি নিয়ে আসতে পারে, এমনকি তা তার রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।

ইতোমধ্যেই মার্কিন নৌবাহিনীর ডেস্ট্রয়ার ও স্থলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলা থেকে ইসরাইলকে রক্ষা করতে সহায়তা করছে।

ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কিছু উপদেষ্টা হয়তো তাকে সতর্ক করছেন যে, এ মুহূর্তে এমন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য, যা ইসরাইলের ইরানবিরোধী হামলাকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে। কারণ কিছু ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ইতোমধ্যেই ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে প্রাণঘাতী হয়েছে।

নেতানিয়াহু এখন বলছেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ওপর হামলা চালালে তাতে সংঘাত বাড়াবে না, বরং সংঘাতের শেষটা এখানেই।

কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন এক কর্মকর্তা কিছু সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন যে তিনি এমন হামলার বিপক্ষে।

৩. পিছিয়ে আসা

ট্রাম্পের মনে যেসব বড় রাজনৈতিক বিষয় ঘুরপাক খাচ্ছে, তার একটি হলো- তার দেশের অভ্যন্তরীণ সমর্থন। কংগ্রেসের বেশিরভাগ রিপাবলিকান সদস্য এখনো ইসরাইলকে জোরালোভাবে সমর্থন করেন। যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহ চালিয়ে যাওয়া। এদের অনেকেই প্রকাশ্যে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলের হামলাকে সমর্থন করে যাচ্ছেন।

কিন্তু ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ বা MAGA আন্দোলনের ভেতরে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর উঠে এসেছে, যারা এখন এই ‘লোহার মতো শক্ত’ ইসরাইলকে সমর্থন দেওয়াকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করছে।

গত কয়েক দিনে তারা প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে ট্রাম্প ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেখানে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার মতো ঝুঁকি কেন নিচ্ছে?

ট্রাম্পপন্থি সাংবাদিক টাকার কার্লসন শুক্রবার কড়া সমালোচনা করে লিখেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি যে তারা যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত নয়। কিন্তু তা সত্য নয়। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইসরাইলকে নিজের মতো করে ছেড়ে দেওয়া।

তিনি বলেন, নেতানিয়াহু এবং তার ‘যুদ্ধপিপাসু সরকার’ এমনভাবে কাজ করছে। যাতে মার্কিন সেনারা বাধ্য হয়ে তাদের হয়ে যুদ্ধ করতে নামে।

কার্লসন লেখেন, ‘এ যুদ্ধে জড়ানোর মানে হবে, যেসব কোটি কোটি ভোটার আশা করেছিলেন একটি সরকার আসবে যারা সত্যিই আমেরিকাকে অগ্রাধিকার দেবে, তাদের মুখের ওপর মধ্যমা আঙুল দেখানো’।

ঠিক একইভাবে, ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক মার্কিন কংগ্রেস সদস্য মার্জোরি টেলর গ্রিন সোশ্যাল হ্যান্ডেল এক্সে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘যারা যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরাইল/ইরান যুদ্ধের পুরোপুরি অংশ বানাতে চায়, তারা ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বা MAGA আদর্শের নয়’।

যা ট্রাম্পের জন্য একটি বড় দুর্বলতার দিক প্রকাশ করে। এতে তার ওপর চাপ বাড়ে ইসরাইলের আক্রমণাত্মক নীতির থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার। আর কিছু কিছু প্রকাশ্য মন্তব্যে দেখাও যাচ্ছে, ট্রাম্প এই চাপের প্রতি সাড়া দিচ্ছেন। সূত্র: বিবিসি

ঢাকায় ভিসা কার্যক্রম শুরু করায় অস্ট্রেলিয়াকে প্রধান উপদেষ্টার ধন্যবাদ

হজ শেষে দেশে ফিরেছেন ২৬ হাজার ১০৯ জন, মৃত্যু বেড়ে ৩২

হাসিনাসহ ১২ জনকে আদালতে হাজির হতে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ

সরকার সবার সঙ্গে সমান আচরণ করছে: প্রেস সচিব

দেশে জ্বালানির দাম বাড়ানোর চিন্তাভাবনা নেই: অর্থ উপদেষ্টা

ইরান ইস্যুতে ট্রাম্পের সামনে যে ৩ পথ খোলা

হানিয়া আমিরের কারণে বয়কটের মুখে দিলজিত

সংসদীয় কমিটির সভাপতির পদ পাবে বিরোধী দল: সালাহউদ্দিন

বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের আইনে জাতিসংঘের উদ্বেগ